দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কের জন্য আরবিআই স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও বাধ্যতামূলক করেছে, ঠিক যেভাবে আপনার বাবা প্রতি মাসে জোর করে কিছু টাকা সাশ্রয় করার জন্য আপনাকে বাধ্য করেন, কারণ তিনি চান আপনার হাতে আসা টাকা যাতে সঠিক ভাবে পরিচালিত হয়. তবে, ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই নিয়মাবলী ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা পরিচালিত হয়. বিষয়টি বুঝিয়ে বলার জন্য আমাদের একটু সুযোগ দিন.
ব্যাঙ্ক কীভাবে তার ব্যবসা পরিচালনা করে?
যে কোনও ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে, সম্পদ এবং দায়বদ্ধতার ধারণা আপনি যা জানেন তার একদম বিপরীত. আপনি সেভিংস/কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাঙ্কে টাকা জমা করেন; এবং বিভিন্ন ব্যবসা ও ইন্ডাস্ট্রিও এই একই কাজ করে. আপনি নিজের চাহিদা অনুযায়ী আপনার সেভিংস/কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারেন; আপনি যখন চাইবেন তখনই এটি করতে পারবেন; কিন্তু কোনও ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে টাকা তোলার সময়সীমা থাকতে পারে. যদি আপনি 1 বছরের জন্য কোনও এফডি-তে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে আপনার অবশ্যই 1 বছর অপেক্ষা করা উচিত এবং তারপর সেটি ভাঙার কথা ভাবতে পারেন. আপনি যে টাকা তুলে নেবেন, তার জন্য কিছু সুদ লাভ করবেন. এই কারণে, এই ধরনের ডিপোজিট যে কোনও ব্যাঙ্কের কাছে দায়বদ্ধতা হয়ে ওঠে, কারণ যখনই আপনি সেটি ভাঙতে চাইবেন তখনই সেই টাকা আপনার হাতে তুলে দিতে হবে. সেভিংস/কারেন্ট অ্যাকাউন্টে (উদাহরণস্বরূপ) রাখা টাকা-কে চাহিদার দায়বদ্ধতা বা ডিমান্ড লায়াবিলিটি বলা হয়, আবার সময়-নির্দিষ্ট করা ফিক্সড ডিপোজিটে (উদাহরণস্বরূপ) জমা করা টাকা-তে সময়ের দায়বদ্ধতা বা টাইম লায়াবিলিটি বলা হয়.
ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন মানুষ এবং সংস্থাগুলিকে লোন দেওয়ার জন্য এই টাকা ব্যবহার করে, যাতে এর মাধ্যমে কিছু সুদ উপার্জন করা সম্ভব হয়. আরও সুদ আয় করার জন্য অন্যান্য ব্যাঙ্কে বিনিয়োগের মাধ্যমেও কোনও ব্যাঙ্ক তার কাছে জমা রাখা টাকার কিছুটা ব্যবহার করতে পারে. এবং যে সমস্ত উৎস টাকার প্রবাহ নিশ্চিত করছে তা ব্যাঙ্কের সম্পত্তি হয়ে উঠবে. প্রতিটি ব্যাঙ্ক তার কাছে দায়বদ্ধতা বা লায়াবিলিটি হিসেবে রাখা টাকা ঋণগ্রহীদের লোন হিসেবে প্রদান করে.
লোন প্রদানের জন্য ব্যাঙ্কের কাছে উপলব্ধ টাকার পরিমাণ-কে তার নেট ডিমান্ড অ্যান্ড টাইম লায়াবিলিটিস (এনডিটিএল) বলা হয়, যা মূলত, আপনার মত মানুষের দ্বারা ব্যাঙ্কে করা সমস্ত ডিপোজিটের পরিমাণ, যা অন্যান্য ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করা পরিমাণের তুলনায় কম.
এনডিটিএল= সমস্ত দায়বদ্ধতা- অন্যান্য ব্যাঙ্কে রাখা ডিপোজিট
এনডিটিএল-এর সাথে এসএলআর কী সম্পর্ক?
এখন, ধরে নিন কোনও ব্যাঙ্কের এনডিটিএল হল ₹10 লক্ষ, তার মানে কি ব্যাঙ্ক এই পুরো ₹10 লক্ষ ঋণ দিতে পারে? না. কারণ যদি এটি ঘটে, তাহলে ব্যাঙ্কের কাছে কোনও লিকুইড টাকা বা বাফার থাকবে না. প্রতিটি ব্যবসার জন্য ক্যাশ লিকুইডিটি প্রয়োজন এবং ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক. ম্যান্ডেট জারি করার মাধ্যমে আরবিআই নির্দেশ দিয়েছে যে, এই ₹10 লক্ষের একটি অংশ ব্যাঙ্কের কাছে রাখতে হবে কিন্তু তা রাখতে হবে লিকুইড অ্যাসেটের আকারে. লিকুইড অ্যাসেট হল এমন সম্পদ যা নগদ কিংবা সহজেই নগদ হিসাবে রূপান্তরিত করা যেতে পারে, যেমন - নগদ, সোনা বা সরকারী সিকিউরিটি ইত্যাদি. এই শতাংশ-কে স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) বলা হয়. আমাদের উদাহরণে, যদি আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে 20% এসএলআর বজায় রাখার নির্দেশ দেয়, তাহলে ব্যাঙ্ক লিকুইড অ্যাসেট হিসেবে ₹2 লক্ষ রাখবে এবং বাকি ₹8 লক্ষ ঋণ হিসেবে প্রদান করতে পারবে. যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে ব্যাঙ্কের কাছে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ₹2 লক্ষ উপলব্ধ থাকবে.
উপরে উল্লেখ করা উদাহরণটি শুধুমাত্র বোঝানোর উদ্দেশ্যে.
এসএলআর= (আরবিআই দ্বারা ম্যান্ডেট করা লিকুইড অ্যাসেট/ এনডিটিএল)%
আরবিআই কেন ব্যাঙ্কের তরফে এসএলআর নিয়ন্ত্রণ করে?
আরবিআই এসএলআর নিয়ন্ত্রণ করে যাতে ঋণ হিসেবে প্রদান করার জন্য সঠিক পরিমাণ টাকার উপলব্ধতা নিশ্চিত করা যায়, তার চেয়ে বেশি বা কম যেন না হয়. ব্যাঙ্কগুলি, তার পরিবর্তে, এসএলআর টাকার উপর সুদ অর্জন করার মাধ্যমে সেগুলি লিকুইড অ্যাসেট হিসাবে রাখে এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য সেটি একটি বাফার হিসাবে ব্যবহার করে. এখানে দেখে নিন কীভাবে এসএলআর সম্পর্কিত নিয়মাবলী আমাদের অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং মুদ্রাকে প্রভাবিত করে. আসুন, দেখে নেওয়া যাক-
সুতরাং, এসএলআর % কমানো বা বাড়ানোর মাধ্যমে, আরবিআই বাজারের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে. সহজ কথায় বলা যেতে পারে, ধরুন আপনার মাসিক আয় ₹1 লক্ষ, আপনার মাসিক ব্যয় হল ₹40,000 এবং বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের পরিমাণ হল ₹20,000 এর ফলে আপনার হাতে নগদ থাকবে ₹40,000, এই টাকা আপনি নিজের ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারেন. এই ক্ষেত্রে আপনার এসএলআর হল 20%. এখন, যদি আপনি এসএলআর বাড়িয়ে 50% করে ফেলেন, তাহলে আপনাকে কম টাকা খরচ করতে হবে (₹ 10,000), এর ফলে যে জিনিসগুলি অবশ্য প্রয়োজনীয় নয় বা পরে হলেও চলবে, এমন সব জিনিসের চাহিদা কমাতে হবে. যেভাবে আপনি নিজের জীবনের সরবরাহ এবং চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করেন, সেই একই কাজ আমাদের দেশের জন্য আরবিআই করে থাকে.
এসএলআর কীভাবে আপনার বিনিয়োগ -কে প্রভাবিত করে?
সহজ ভাবে আলোচনা করার জন্য, আমরা সরকারী সিকিউরিটিতে ফোকাস করি. এখন, ধরে নেওয়া যাক যে আরবিআই এসএলআর বাড়িয়ে দিয়েছে, এর অর্থ হল ব্যাঙ্কগুলিকে লিকুইড অ্যাসেট হিসেবে আরও বেশি পরিমাণ টাকা রাখতে হবে এবং তাই বেশি ব্যাঙ্কগুলি আরও বেশি সরকারী সিকিউরিটি-তে বিনিয়োগ করবে. স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, জি-সেকের চাহিদা অনেকটাই বেশি হয় কারণ এগুলি অর্জন করা কঠিন, এবং তাদের মূল্য অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে. যদি আপনি, একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে, জি-সেকে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে সেগুলি কিনতে গিয়ে আপনি সমস্য়ার সম্মুখীন হতে পারেন. কারণ, সমস্ত ক্ষেত্রে যখনই চাহিদা অত্যন্ত বেশি বৃদ্ধি পায়, তখনই তার সাথে সংযুক্ত সুবিধাগুলি কমে যায়. সুতরাং, জি-সেকের সাথে যুক্ত সুদ % কমে যাবে. আপনি যদি এসএলআর বৃদ্ধি পাওয়ার আগে কোনও জি-সেকে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে রিডিম করালে আপনি আরও বেশি রিটার্ন পাবেন, কারণ এখন বন্ডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে.
বর্ধিত এসএলআর-এর অর্থ হল ডেট বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি হারে রিটার্ন পাবেন.
মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ মার্কেটের ওঠাপড়ার মতো ঝুঁকির উপরে নির্ভরশীল, স্কিম সম্পর্কিত সমস্ত ডকুমেন্ট ভালো ভাবে পড়ে নিন.