কার্যকরী আর্থিক পরিকল্পনার জন্য কিছু টিপস
যদি আপনি সদ্য আর্থিক পরিকল্পনা শুরু করে থাকেন, তাহলে আপনার মন নানা রকমের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জর্জরিত থাকতে পারে-
শুরু করার আগে নানা রকম প্রশ্ন করা সবসময় খুব জরুরি কারণ এর দ্বারা বোঝা যায় যে, আপনি সমাধান খুঁজছেন. এখানে মনে রাখার মতো প্রাসঙ্গিক বিষয় হল, আর্থিক পরিকল্পনা মোটেই একদিন বা এক সপ্তাহের কাজ নয়; একে একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া বলা যায়.
সুতরাং, আসুন আমরা শুরু করি এবং দক্ষ ভাবে আর্থিক পরিচালনা করার জন্য আপনাকে যে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে, সেগুলি একবার দেখে নিই.
1 আপনার লক্ষ্য স্থির করুন
আপনি জীবনের যে পর্যায়েই থাকুন না কেন, আপনার জীবনে কিছু অবশ্যম্ভাবী বড় বড় ঘটনার জন্য আগাম পরিকল্পনা করার প্রয়োজন রয়েছে. আপনার লক্ষ্যগুলি কতটা পূরণ করতে পেরেছেন তার উপর ভিত্তি করে, তাদের এই শ্রেণীগুলিতে বিভক্ত করা যেতে পারে-
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য: এই লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে আপনার অবসর পরিকল্পনা বা আপনার সন্তানের উচ্চ শিক্ষা/বিবাহ, যেগুলি হয়তো 8-10 বছর বা তারও পরে হবে.
মধ্যমেয়াদী লক্ষ্য: আপনার পছন্দের দামী গাড়ি কেনা, নতুন বাড়ি কেনার জন্য ডাউন পেমেন্ট করা বা দ্বিতীয় কেরিয়ার শুরু করার মতো লক্ষ্য, যা 3-7 বছর পরে পূরণ করতে হবে, সেগুলি হল আপনার মধ্যমেয়াদী লক্ষ্য.
স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য: স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হল আপনার পরবর্তী ছুটির পরিকল্পনা, আপনার বিয়ের জন্য প্রস্তুতি ইত্যাদির মতো লক্ষ্য, যেগুলি আগামী 1-3 বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে.
যদি আপনি বুঝতে পারেন যে, আপনি কীসের জন্য পরিকল্পনা করছেন, তাহলে বিনিয়োগের পদ্ধতি এবং সঞ্চয় করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়. এছাড়াও, আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে সর্বদা সবচেয়ে কঠিন লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা শুরু করুন, কারণ সেগুলির জন্য সবচেয়ে বেশি বাধা-বিপত্তি পেরোতে হয়.
2 নিশ্চিত করুন যেন আপনার পর্যাপ্ত হেলথ ইনস্যুরেন্স থাকে
মেডিকেল খরচ ক্রমশ বৃদ্ধির পাচ্ছে, তাই এমন একটি হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি কেনা জরুরি যা আপনাকে এবং আপনার পরিবার-কে পর্যাপ্ত পরিমাণে কভার করবে, কারণ যে কোনও সময়ে এর প্রয়োজন হতে পারে. আপনি আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পলিসি নির্বাচন করতে পারেন; উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিশেষভাবে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এবং জটিল পরিচর্যা প্রয়োজন এমন সমস্ত রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়ালিসিস ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট ভাবে ডিজাইন করা পলিসি রয়েছে. যে কোনও হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি আপনাকে আপনার পকেটে থেকে চিকিৎসা বাবদ খরচ কমাতে সাহায্য করে, এবং আপনি ভবিষ্যতের কোনও লক্ষ্যের জন্য সেই টাকা সাশ্রয় করতে পারেন. আপনি যে প্রিমিয়াম পে করবেন তার জন্য আয়কর আইন, 1961 এর ধারা 80D এর অধীনে কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন.
3 নিশ্চিত করুন যেন আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টার্ম লাইফ ইনস্যুরেন্স থাকে
আপনার এবং/অথবা আপনার পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কেনা প্রয়োজন যে কোনও মেডিকাল ইমার্জেন্সির কথা ভেবে, তার পাশাপাশি দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আপনার অকালমৃত্যুর ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে আপনার প্রিয়জনদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য একটি লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসি কেনা জরুরি. টার্ম লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসি হল এক ধরনের বিশুদ্ধ লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসি যার প্রিমিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম ও কভারেজ অনেক বেশি. আয়কর আইন, 1961 এর ধারা 80C এর অধীনে কোনও টার্ম পলিসির প্রিমিয়াম বাবদ পে করা টাকার উপরে কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়.
4 একটি বাজেট পরিকল্পনা করুন এবং তা মেনে চলুন
একটি সাধারণ ভুল অনেকেই করে থাকেন, সেটি হল সারা মাসে খরচ করার পরে যে টাকা বেঁচে থাকে অনেকেই সেটি বিনিয়োগ করেন. কিন্তু আসলে যেটা করা উচিত তা হল, বিনিয়োগের পরে যে পরিমাণ টাকা বাঁচবে সেটা সারা মাসে খরচ করা উচিত. আপনার মাসিক উপার্জন, ব্যয় এবং বিদ্যমান বিনিয়োগগুলি নোট করার মাধ্যমে আপনার কাজ শুরু করতে পারেন এবং আরও বেশি টাকা সাশ্রয় করার জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলি বন্ধ করার চেষ্টা করুন.
5 সঠিক ভাবে ট্যাক্স প্ল্যানিং করুন
প্রথম পদক্ষেপ হল, আপনি কোন ট্যাক্স ব্র্যাকেটে পড়েছেন তা জেনে নেওয়ার মাধ্যমে আপনার ট্যাক্স লায়াবিলিটি সম্পর্কে বিশদে বুঝতে হবে. এছাড়াও যখন আপনি বিনিয়োগ করছেন, তখন ট্যাক্স-সেভিং পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা আপনাকে ভালো রিটার্ন দেওয়ার পাশাপাশি ট্যাক্স ছাড় পেতেও সাহায্য করবে. উদাহরণস্বরূপ, ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম আয়কর আইনের ধারা 80C এর অধীনে আপনাকে ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা প্রদান করে এবং এটি একটি ইক্যুইটি-ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম. এই ট্যাক্স-সেভিং প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য লক-পিরিয়ড সম্পর্কে অবশ্যই আপনাকে জেনে নিতে হবে
6 অবসর সম্পর্কিত পরিকল্পনা
আপনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হতে পারে আপনার অবসর-এর জন্য সাশ্রয় করা, যাতে অবসর গ্রহণের পরে আপনাকে কারও উপরে আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হতে না হয়. এটি একমাত্র তখনই কার্যকর করা সম্ভব হবে যদি আপনি এমন কোনও বিনিয়োগ বিকল্প বেছে নেন যেখানে দীর্ঘ-মেয়াদে এমন পরিমাণ রিটার্ন মিলবে, যা আপনার জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট. এই ধরনের স্কিমে আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে চান তা নির্ধারণ করার সময় আপনাকে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি মনে রাখতে হবে.
7 নমিনি
আপনি যতগুলো সেভিং প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন তার প্রতিটির জন্য যদি কাউকে নমিনি ঘোষণা না করেন, তাহলে আপনার আর্থিক পরিকল্পনা সঠিক ফলাফল প্রদান না-ও করতে পারেন. এছাড়াও পরামর্শ দেওয়া হয় যে, আপনার সমস্ত পলিসি এবং স্কিমগুলি একটি জায়গায় তালিকাভুক্ত করে রাখুন এবং নমিনি হিসেবে মনোনীত ব্যক্তিদের সাথে তা ভাগ করে নিন, ফলে আপনার অবর্তমানে তাঁদের পক্ষে সেই তালিকা খুঁজে পাওয়া এবং তার সুবিধা গ্রহণ করা অনেকটাই সুবিধাজনক হবে.
8 ইমার্জেন্সি ফান্ড
ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে একটি লিকুইড ফান্ড রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়. আপনি এই পরিমাণটি কোনও ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন যেখানে তুলনামূলক ভাবে বেশি হারে লিকুইডিটি এবং কম অস্থিরতার সুবিধা রয়েছে, এর ফলে এই টাকা আপনার প্রয়োজনের সময় সহজেই হাতে পেতে পারেন এবং একই সাথে বিনিয়োগ না-করা টাকার তুলনায় এই বিনিয়োগ থেকে বেশি পরিমাণে রিটার্ন পাবেন.
উপরের তালিকার বাইরে আরও কয়েকটি বিষয় রয়েছে. বিনিয়োগ সম্পর্কিত প্ল্যানগুলি লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে, বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এবং সেগুলি কখনওই সকলের জন্য এক হতে পারে না. বিনিয়োগকারীদের উচিত তাঁদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত বিভিন্ন বিকল্প সম্পর্কে আরও ভালো ভাবে বোঝার জন্য একজন আর্থিক উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করা.
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক তথ্য: সমস্ত মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের এককালীন KYC (নো ইওর কাস্টমার) প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে. বিনিয়োগকারীদের শুধুমাত্র রেজিস্টার করা মিউচুয়াল ফান্ডেই ডিল করা উচিত, যাদের এসইবিআই ওয়েবসাইটে 'ইন্টারমিডিয়ারি/মার্কেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনস্টিটিউশন‘-এর অধীনে ভেরিফাই করা যাবে’. আপনার অভিযোগের সমাধানের জন্য, আপনি www.scores.gov.in পরিদর্শন করতে পারেন. KYC সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, বিভিন্ন বিবরণে পরিবর্তন এবং অভিযোগের সমাধান করার জন্য, ভিজিট করুন: https://www.nipponindiamf.com/InvestorEducation/what-to-know-when-investing.htm. এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষা এবং সচেতনতামূলক বিষয়ে নিপ্পন ইন্ডিয়া মিউচুয়াল ফান্ডের একটি উদ্যোগ.