মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড
আপনার বিনিয়োগের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি মূলত অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে মূলত দুইটি প্রধান বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হয় - রিস্ক এবং রিটার্ন. শুধুমাত্র একটি অ্যাসেট ক্লাসে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে; যদি এটি খারাপ পারফর্ম করে? সুতরাং, আপনার ঝুঁকির সম্ভাবনা হ্রাস করার জন্য আপনার বিনিয়োগের পোর্টফোলিওতে ডাইভার্সিফাই করে তুলতে হবে, অর্থাৎ যদি অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে কোনও একটি খারাপ পারফর্ম করে, তাহলে সেখানে বাকিরা সেখানে ভালো পারফর্ম করবে এবং তাই আপনার রিটার্নের পরিমাণ আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাবে না. ঝুঁকি এবং রিটার্নের মধ্যে এই টানাপোড়েনের মধ্যে, যে বিষয়টি প্রধান ভূমিকা পালন কর তা হল আপনার অ্যাসেট অ্যালোকেশন. যে অ্যাসেট ক্লাসগুলি দুর্বল/ নেগেটিভ ভাবে কো-রিলেটেড ও বিভিন্ন সময়ে এর পারফর্মেন্স ভিন্ন রকম হয় এবং কোনও ব্যক্তির পক্ষে এর উপরে নির্ভর করা মুশকিল হয়ে যায়
#বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, পোর্টফোলিও রিটার্নের 90% এর বেশি অ্যাসেট অ্যালোকেশন সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে. সুতরাং, অ্যাসেট ক্লাস এবং সাব-অ্যাসেট ক্লাসগুলিতে বিনিয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ. আপনার পোর্টফোলিওতে একটি মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড থাকা উচিত যেখানে, অ্যালোকেশন গোল্ড, ইক্যুইটি, ডেট ইত্যাদির মধ্যে বিতরণ করা হবে. এটি আপনাকে প্রয়োজনীয় ডাইভার্সিফিকেশানের সুবিধা প্রদান করবে.
#সোর্স: অ্যাসেট অ্যালোকেশন পলিসি কি পারফর্মেন্সের 40%, 90% বা 100% ব্যাখ্যা করে?
অ্যাসেট অ্যালোকেশন-এর গুরুত্ব
গত এক দশকে আমরা দেখেছি যে বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাস ভিন্ন রিটার্ন প্রদান করে থাকে, অর্থাৎ একটি অ্যাসেট ক্লাস ভালো পারফর্ম করলে, অপর কোনও একটি ভালো পারফর্ম না-ও করতে পারে. গত 10 বছরের মধ্যে, গোল্ড, ইক্যুইটি এবং ডেট যথাক্রমে 5 বছর, 3 বছর এবং 2 বছর ধরে অসাধারণ পারফর্ম করেছে. এক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্রেন্ডের পাশাপাশি, নানা রকম প্রবণতার গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে. সুতরাং, এই বৈচিত্র্য তৈরির কারণেই অ্যাসেট অ্যালোকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে.
অ্যাসেট অ্যালোকেশন-এর সুবিধা:
1 অ্যাসেট অ্যালোকেশন হল পোর্টফোলিও রিটার্নের মূল চালিকাশক্তি
2 যেহেতু বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে কিছু দুর্বল বা নেগেটিভ কো-রিলেশন রয়েছে; তাই অ্যাসেট অ্যালোকেশন পোর্টফোলিও ডাইভার্সিফিকেশন -এর কাজে সাহায্য করে
ডাইভার্সিফিকেশনের কারণে সামগ্রিক ঝুঁকি (অস্থিরতা) অনেকটাই কমে যায় এবং এই কারণে সঠিক অ্যাসেট অ্যালোকেশন করা হলে তার ফলস্বরূপ তুলনামূলক ভাবে বেশি রিস্ক-অ্যাডজাস্টেড রিটার্ন পাওয়া যায়.
আমরা কীভাবে সঠিক পদ্ধতিতে অ্যাসেট অ্যালোকেশন করতে পারি?
আপনি ভাবতে পারেন যে, এমন কোনও প্রোডাক্টের কি অস্তিত্ব আছে যা অ্যাসেট অ্যালোকেশনের সুবিধা প্রদান করতে পারে, তাহলে আর নিজেকে অ্যাসেট অ্যালোকেশন নিয়ে চিন্তা করতে হয় না. হ্যাঁ, অবশ্যই আছে.
যে কোনও মাল্টি-অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড ন্যূনতম তিনটি অ্যাসেট ক্লাসে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে উপরোক্ত সুবিধাগুলি প্রদান করতে পারে. এটি একাধিক অ্যাসেট ক্লাসের কম্বিনেশনে বিনিয়োগ করে যেগুলি দুর্বল ভাবে/নেগেটিভ ভাবে কোরিলেটেড এবং এর মাধ্যমে অনেক কম অস্থির চরিত্রের ও তুলনামূলক ভাবে বেশি পরিমাণে রিস্ক-অ্যাডজাস্টেড রিটার্ন প্রদান করতে পারে. মাল্টি-অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড এই ফান্ডের মধ্যেই দারুণ ব্যালেন্স রক্ষা করার মাধ্যমে কর ছাড়ের দারুণ সুবিধা প্রদান করে
.
মূলত তিনটি উপায়ের মাধ্যমে এই ফান্ডগুলি এই লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করে
ভিউ-বেসড অ্যাসেট অ্যালোকেশন
ভিউ-বেসড অ্যাপ্রোচ-এর ক্ষেত্রে, ফান্ড ম্যানেজার কোনও নির্দিষ্ট অ্যাসেট ক্লাস সম্পর্কে একটি ভিউ বা মতামত গ্রহণ করেন এবং সেই অ্যাসেট ক্লাসে বেশি পরিমাণ ও অন্যান্য অ্যাসেট ক্লাসে কম পরিমাণ বিনিয়োগ করেন. তবে, এই পদ্ধতির মূল সমস্যা হল, ফান্ড ম্যানেজার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কিন্তু তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অস্বীকার করা যায় না, এবং এর ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে. তিনি শুধুমাত্র ভুল অ্যাসেট ক্লাসে বেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেননি, তার পাশাপাশি তিনি এমন কিছু অ্যাসেট ক্লাসে কম বিনিয়োগ করেছেন যেগুলো পরবর্তী কালে দারুণ পারফর্ম করতে পারে. ভিউ-বেসড অ্যাপ্রোচ-এর ফলে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশঙ্কা বেশি থাকে. কারণ কোন অ্যাসেট ক্লাস ভালো/খারাপ পারফর্ম করবে তা একাধিক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে এবং এই কারণে সেই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন.
মডেল-বেসড অ্যাসেট অ্যালোকেশন
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল মডেল-বেসড অ্যাপ্রোচ এখানে একটি পরিমাণ ভিত্তিক মডেল বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হয় যা নির্ণয় করার চেষ্টা করে যে কোন অ্যাসেট ক্লাস ভালো/খারাপ পারফর্ম করবে এবং সেই অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়. তবে এই পদ্ধতিতেও ভিউ বেসড-অ্যাপ্রোচের মতো একই সমস্যা হতে পারে. এই মডেলে এমন একাধিক বিষয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে যেগুলি আগাম অনুমান করা অত্যন্ত জটিল, এমনকী অসম্ভব.
কনস্ট্যান্ট অ্যাসেট অ্যালোকেশন
তৃতীয় পদ্ধতি হল একটি কনস্ট্যান্ট অ্যালোকেশন অ্যাপ্রোচ. এটি একটি সহজ পদ্ধতি, অথচ অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে. এর মূল মন্ত্র হল, মার্কেটের পর্যায় বা ফেজ অনুযায়ী রিস্ক-অ্যাডজাস্টেড রিটার্ন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের অ্যাসেট ক্লাসে (যেগুলি দুর্বল ভাবে কোরিলেটেড) পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়া.
সব শেষে বলা যায়-
আপনি মনে করতে পারেন যে, কোনও মাল্টি-অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড আপনার অ্যাসেট অ্যালোকেশন সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান হতে পারে, তাহলে মনে রাখতে হবে যে, ফান্ড দ্বারা গৃহীত পদ্ধতিও এক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে. সুতরাং, এমন কোনও মাল্টি-অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ডে বিনিয়োগ করা ভালো, যেখানে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পদ গঠন -এর উদ্দেশ্যে কনস্ট্যান্ট অ্যালোকেশন অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করা হয়েছে!